
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলো যুক্তরাজ্য কানাডা-অস্ট্রেলিয়া
- আপলোড সময় : ২২-০৯-২০২৫ ০২:০৭:২৭ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২২-০৯-২০২৫ ০২:০৭:২৭ অপরাহ্ন


ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া। গতকাল রোববার তিনটি দেশ পর্যায়ক্রমে এ ঘোষণা দেয়। এরমধ্যে প্রথম ঘোষণা আসে কানাডার পক্ষ থেকে। এরপর দ্বিতীয় দেশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া ও সর্বশেষে যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিনিকে স্বীকৃতি দেয়।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় বলেন, ‘শান্তি ও দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান পুনরুজ্জীবিত করতে আমি আজ অসাধারণ এ দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করছি যুক্তরাজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।’ অপরদিকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বলেছেন, ‘কানাডা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। একইসঙ্গে ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েলের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যত গঠনে অংশীদারিত্বের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।’ কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনিকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলেছিল। তবে এর আগেই স্বীকৃতির ঘোষণা দিলো তারা। অপরদিকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছিল, গতকাল রোববার যুক্তরাজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনিকে স্বীকৃতি প্রদান করবে। চলতি বছরের জুলাইয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, সেপ্টেম্বরের মধ্যে যদি ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হয় এবং দীর্ঘমেয়াদি টেকসই শান্তিচুক্তির প্রতিশ্রুতি না দেয়, তবে যুক্তরাজ্য তাদের অবস্থান পাল্টাবে। এটি ব্রিটিশ পররাষ্ট্রনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন, কারণ এতদিন ধরে দেশটির সরকারগুলো ধারাবাহিকভাবে বলছিল, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি আসবে কেবল শান্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এবং সর্বোচ্চ প্রভাব ফেলতে পারে এমন সময়ে।
যুক্তরাজ্যের সঙ্গে কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপের দেশ পর্তুগাল ও ফ্রান্সও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। ইউরোপের আরও তিনটি দেশ স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে গত বছরই এই পদক্ষেপ নিয়েছে। জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য দেশের প্রায় ৭৫ শতাংশ এরই মধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এদিকে, যুক্তরাজ্যের এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছে ইসরায়েলি সরকার, জিম্মিদের পরিবার ও কিছু কনজারভেটিভ নেতা। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, এমন পদক্ষেপ ‘সন্ত্রাসকে পুরস্কৃত করার’ সমান। তবে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীরা বলেন, দীর্ঘমেয়াদি শান্তির আশা টিকিয়ে রাখতে নৈতিক দায়িত্ব থেকেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। সরকারি সূত্র জানিয়েছে, গত কয়েক সপ্তাহে গাজার পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। তারা বলছে, গাজায় অনাহার ও সহিংসতার চিত্র ‘সহ্য করা যাচ্ছে না। ইসরায়েলের সর্বশেষ স্থল অভিযানকে এক জাতিসংঘ কর্মকর্তা ‘মহাপ্রলয়সদৃশ’। দখলদার বাহিনীর অভিযানে লাখ লাখ মানুষ গাজা সিটি থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছে। চলতি সপ্তাহের শুরুতে জাতিসংঘের এক তদন্ত কমিশন উপসংহার টানে যে, গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েল গণহত্যা চালিয়েছে। ইসরায়েল এই প্রতিবেদনকে ‘বিকৃত ও মিথ্যা’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। ব্রিটিশ মন্ত্রীরা আরও বলেন, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের ক্রমাগত সম্প্রসারণ আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ ও এটাই তাদের এই সিদ্ধান্তে বড় ভূমিকা রেখেছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস চলতি মাসের শুরুতে স্টারমারের সঙ্গে বৈঠকে যুক্তরাজ্যের স্বীকৃতির প্রতিশ্রতিকে স্বাগত জানান। দুই নেতা একমত হন যে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন শাসন ব্যবস্থায় হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না।
এদিকে ইসরায়েলের ভেতরেই যুদ্ধবিরোধী মনোভাব এখন অনেক তীব্র। ২২ মাস আগে গাজায় হামলার সময় জনসমর্থন ছিল প্রায় সর্বসম্মত। কিন্তু বর্তমানে জরিপ বলছে, ইসরায়েলিদের ৭০ শতাংশ যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া নয়, বরং যুদ্ধবিরতির পক্ষে। সেনাবাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইইয়াল জামিরও মনে করেন, হামাসকে পুরোপুরি ধ্বংস করা সম্ভব নয়, আর দীর্ঘমেয়াদি এই লড়াইয়ে অবশিষ্ট জিম্মিদের জীবনও বিপন্ন হবে। তার পছন্দ যুদ্ধবিরতি, যাতে জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করা যায়। ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, গাজা শহরে হামলা চলার সময় কিছু জিম্মিকে মানবঢাল হিসেবে কেন্দ্রীয় এলাকায় সরিয়ে আনা হয়েছে। অভিযান শুরুর সঙ্গে সঙ্গে জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর বাসভবনের সামনে জিম্মিদের স্বজনরা বিক্ষোভ করেছেন। তাদের অভিযোগ, এই পদক্ষেপ মানে সন্তানদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত ইসরায়েলকে সমর্থন করছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযান শুরুর সঙ্গে সঙ্গে হামাসকে হুঁশিয়ারি দিয়ে সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, ‘সব বাজি শেষ, অবিলম্বে সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে।’ তবে কূটনৈতিক মহলে ধারণা, এই অভিযানও যদি শেষ পর্যন্ত হামাসকে পুরোপুরি দুর্বল করতে না পারে, তাহলে ওয়াশিংটন যুদ্ধবিরতি চাপিয়ে দেবে। সব মিলিয়ে, গাজা শহরে এই নতুন আক্রমণ ইসরায়েলের জন্য বিজয় নয়, বরং আরও রক্তপাত, ফিলিস্তিনিদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গভীরতর একাকিত্ব বয়ে আনবে।
উল্লেখ্য, দুই বছর ধরে চলা এই সংঘাতে প্রায় ৬৫ হাজার ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও ১ লাখ ৬৫ হাজার ৩১২ ফিলিস্তিনি। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও বহু মানুষ আটকা পড়ে আছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ